মারিয়ানেলা (পর্ব ১৬)


বেনিতো পেরেস গালদোস (১৮৪৩—১৯২০) স্পেনের সর্বশ্রেষ্ঠ কথাশিল্পীদের পাশে একইসঙ্গে উচ্চারিত হয় বেনিতো পেরেস গালদোসের নাম।ঊনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক তিনি।তাঁর অন্যতম উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল 'ফোরতুনাতা এবং হাসিন্তা','জাতীয় ঘটনাক্রম'। 'মারিয়ানেলা', 'দন্যা পেরফেক্তা'' ইত্যাদি। বেনিতো পেরেস গালদোস জন্মগ্রহণ করেন ১৮৪৩ সালে গ্রেট কানারিয়া দ্বীপপুঞ্জের 'লাস পালমাস' নামক সুন্দর এক দ্বীপে।কর্ণেল পিতার মুখে স্পেনের স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্প শুনে বড়ো হয়েছেন গালদোস। স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কাহিনির প্রতি তাঁর আগ্রহের সৃষ্টি হয় অতি অল্প বয়সে। ১৮৬২ সালে সাহিত্য এবং কলায় স্নাতক হওয়ার পর তিনি সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রহসন-কবিতা, প্রবন্ধ এবং গল্প লিখতে থাকেন। সেই সময় থেকেই চিত্রকলায় আগ্রহী হতে থাকেন। নাটকে বিশেষ আগ্রহ থাকায় তিনি মাদ্রিদে থাকাকালীন প্রায়শই নাটক দেখতে যেতেন। এই শহরেই স্পেনীয় লেখক লেওপোলদো আলাস ক্লারিন-এর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। গালদোস ছিলেন লাজুক স্বভাবের, সহজ জীবন তাঁর ভালো লাগত,জনসভায় বক্তৃতা দেওয়া পছন্দ ছিল না তাঁর, অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন লেখক, 'দন কিহোতে' উপন্যাসটির পাতার পর পাতা তিনি মুখস্থ বলে দিতে পারতেন। বালজাক এবং ডিকেন্স তাঁর প্রিয় লেখক। ১৮৭৩ সালে শুরু করে চল্লিশ বছর ধরে চার খন্ডে 'জাতীয় ঘটনাবলি' রচনা করেন। ঊনবিংশতি শতাব্দীর স্পেনীয় জীবনের আলেখ্যটি মহান সাহিত্যকীর্তি হিসেবে গণ্য হয় এবং ইতিহাস-ভিত্তিক উপন্যাস রচনার ধারাটিকে পুষ্ট করে। বাস্তববাদী লেখক গালদোসের অন্যান্য রচনার মধ্যে আছে ৫১টি উপন্যাস,২৩টি নাটক এবং ২০টি খন্ডের অন্যবিধ রচনা। তিনি ছিলেন বহুপ্রজ লেখক। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত হয় 'দন্যা পেরফেক্তা'(Dona Perfecta) অর্থাৎ 'শ্রীমতী পারফেক্ট'। এই উপন্যাসের মূল বিষয় মতাদর্শগত সংঘাত। ১৮৮৯ সালে স্প্যানিশ রয়াল একাডেমির সদস্যপদ লাভ করেন গালদোস।জীবনের শেষ দিকে তিনি নাটক রচনায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। স্পেনের অন্যতম সমকালীন লেখক পিও বারোহার (উচ্চারণভেদে বারোখার) মতে 'তিনি জানতেন মানুষকে কীভাবে কথা বলাতে হয়।' লোকজীবনের সাদামাঠা ভাষাই ছিল তাঁর পছন্দ, অলঙ্কারসমৃদ্ধ জমকালো বাক্য তিনি লিখতেন না। ১৯১২ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্যে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয় এবং স্পেনের সাহিত্যজগতে তুমুল আলোড়ণ ওঠে কিন্তু শেষপর্যন্ত তা বাতিল হয়ে যায়। অসম্ভব জনপ্রিয় গদ্যকার বেনিতো পেরেস গালদোস ১৯২০ সালে মাদ্রিদে প্রয়াত হন। কুড়ি হাজারের বেশি মানুষ তাঁর অন্তেষ্টিতে অংশগ্রহণ করেন।

প্রতিশ্রুতি
পর্ব – ১৬
পরের কিছুদিন তেমন কিছু হল না, কিন্তু সেই সময় এমন একজন এল যাতে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল, বিশাল তাৎপর্যময়, তার ওপরে আর কিছু বলার থাকে না। অস্ত্রোপচারে সিদ্ধহস্ত শিল্পীর নিপুণ তুলির মতো যাঁর হাতে ছুরিকাঁচি কাজ করে সেই তেওদোরো গোলফিন প্রকৃতির একটি সূক্ষ্ম অসংগতির অবসান ঘটাতে চাইলেন। ধীমান এই ব্যক্তি আন্তরিকভাবে বিজ্ঞান-মনস্ক চিকিৎসক, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এবং দার্শনিকসুলভ মনোভাবে ঋদ্ধ, তাঁর সমগ্র জ্ঞানভাণ্ডার নিয়ে প্রবেশ করলেন এমন এক বিস্ময়কর রাজ্যে যার মধ্যে বিশ্বের যাবতীয় স্থাপত্যের সংক্ষিপ্ত রূপ বিরাজমান। মানুষ যখন বাস্তব জগৎ দেখার ক্ষমতাটুকু হারিয়ে ফেলে তখন জীবনের রহস্যময়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, জানতে ইচ্ছে হয় কী কারণে চোখের সামনে এমন দুস্তর বাধা তৈরি হয়। এই মহাজিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজতে গিয়ে তাঁকে কাজ করতে হয় উদ্দীপিত চেতনা নিয়ে, ‘কর্ণিয়া’ নামের অতি সূক্ষ্ম প্রত্যঙ্গটি ভেঙে আলোর সন্ধান করতে হয়, অভ্যন্তরস্থিত সবকিছু যথাস্থানে সঠিকভাবে রেখে অক্ষিগোলকের কাটাছেঁড়া করার পর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার কাজটি করতে হয়।
অনুবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা একমাত্র যা দেখা সম্ভব তার অভ্যন্তরে অতি জটিল অভিযানের পর কথা বলার তেমন অবকাশ থাকে না, মহাশূন্যে গ্রহ-উপগ্রহের দূরত্ব মাপার মতোই এই কাজ এক বিশাল অভিযান। পরিবারের সবাই ভয়ে নীরব হয়ে অপেক্ষা করে। মৃত ব্যক্তির পুনর্জীবন লাভ অথবা একটি পৃথিবী নির্মাণ করার মতোই এই অস্ত্রোপচার। গোলফিন কিন্তু সঠিকভাবে কিছু বলছেন না; তাঁর কথা এইরকম:
-চোখের মণির সঙ্গে সংযোগ…‘রেটিনা’ সতেজ আছে…অবস্থা অনেকটা কাঁচা রঙ্গের…নার্ভগুলো সজাগ। কিন্তু পরম আশ্চর্য ঘটনা, অবিশ্বাস্য, অসম্ভব, দৃষ্টিশক্তি কোথায় গেল ?
-সময় হলেই জানা যাবে— ব্যান্ডেজ বাঁধতে বাঁধতে বলেন তেওদোরো— ধৈর্য চাই।
সিংহের মতো শরীর তাঁর, হতাশা কিংবা বিজয়বার্তা ঘোষণার কোনো ইঙ্গিত নেই তাঁর মুখেচোখে, আশাও দিচ্ছেন না, তা ছাড়তেও বলছেন না। তিনি যা শিখেছেন সবই বিজ্ঞান থেকে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে যাঁরা গৌরব অর্জন করেছেন তাঁদের মতই তিনি সৃজনশীলতার অন্য এক মুখ। প্রকৃতি নিজের গোপন শক্তিতে বিস্মিত হয় না, সে থাকে নির্বাক, গম্ভীর আর সবকিছুই চলে যেমন চলার।
রোগীর সঙ্গে সংযোগ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। শুধু তার বাবা কাছে থাকতে পারেন। পরিবারের অন্য কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারবে না। নেলা চার-পাঁচবার রোগীর খোঁজ নেবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু গেটের মধ্যে ঢুকতে পারেনি, বাইরে অপেক্ষা করেছে, বেরোতে দেখেছে দন মানুয়েল, তাঁর কন্যা এবং বাড়ির অন্য কাউকে। এই মেয়েটি(ফ্লোরেন্তিনা) কিছু সংবাদ আনে, পরিবারের উদবেগ কথা বলে এবং নেলার সঙ্গে একটু হাঁটে।
একদিন ফ্লোরেন্তিনা মারিয়ানেলার বাড়ি দেখতে চাইল এবং দুজনে সেনতেনোর বাড়ি এল, বাড়ির ভেতরটা দেখে একটু খারাপ লাগে আগন্তুকের, তারপর নেলার বিছানা হয় যে ঝুড়ির মধ্যে সেটা দেখে খুবই মর্মাহত হল।
-খুব শিগগির নেলাকে চলে আসতে হবে, আমার সঙ্গে থাকবে -ওই স্যাঁতসেঁতে গুহা থেকে বেরিয়ে বলল ফ্লোরেন্তিনা -আমার বিছানার মতোই হবে ওর বিছানা, আমি যা খাই তাই ও খাবে।
সেনতেনোর স্ত্রী এই কথা শুনে হতবাক, মারিউকা এবং পেপিনা ভাবতে লাগল সেই গল্পের কথা, এক দুঃখী অনাথ মেয়ে পড়েছিল পথে, তাকে উদ্ধার করল এক রাজা বা রাজকুমার, কিন্তু সেতো এক গল্পই।
ওরা দুজন ছাড়া তখন কেউ নেই, ফ্লোরেন্তিনা মারিয়াকে বলল: রাতদিন ঈশ্বরকে বলো, আমাদের যেমন চোখের আলো আছে আমার প্রিয় তুতো দাদাটা যেন সেই আলোটা পায়, তার যে ওটা খুব দরকার। আমাদের উৎকণ্ঠা যে ভীষণ বেড়ে যাচ্ছে। দৃষ্টিসুখ হাজার সুখের দরজা খুলে দেবে, অনেক ক্ষতি, অনেক দুঃখ দূর হয়ে যাবে। ‘কুমারী মায়ের’ কাছে আমি পবিত্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছি: বলেছি যে, আমার তুতো দাদা যদি চোখে দেখতে পায় তাহলে আমি যে দরিদ্রতম মানুষকে দেখতে পাব তাকে সবকিছু দেব, যাতে সে দারিদ্রের কথা সম্পূর্ণ ভুলে যায়, জীবনে আমি যা যা পেয়েছি সব সে পাবে, আমরা সমান সমান হব। একজন মানুষকে ভালো পোশাক পরালে কিংবা টেবিলে বসিয়ে সুপ আর মাংস খেতে দিলেই শুধু হবে না। তাকে দিতে হবে সর্বশ্রেষ্ঠ ভিক্ষে, যা সবার কাম্য অথচ অনেকেই তা থেকে বঞ্চিত, তা হল সম্মান, আমি সেই দরিদ্রকে এসব দেব, তাকে দেব আত্মবিশ্বাস এবং আত্মমর্যাদা, মানুষের মতো মানুষ হবার অধিকার দেব। আমার সেই দরিদ্র মানুষটিকে পেয়েছি। মারিয়া, তুমি আমার সেই দরিদ্র। সর্বান্তঃকরণে আমি ‘সাধ্বী কুমারী মা’কে বলেছি, যদি আমার তুতো দাদাটি দৃষ্টিশক্তি পায় তোমাকে আমার বোন বলে গ্রহণ করব: আমার বাড়িতে আমি যা তুমিও তাই থাকবে, আমার নিজের বোন হবে তুমি।
এই কথা বলে ‘কুমারী মা’ ভালোবাসায় নিজের বাহুদ্বয়ের মধ্যে জড়িয়ে ধরে নেলাকে, তার কপাল চুম্বন করে গভীর মমতায়। এমন চূড়ান্ত মুহূর্তে অসহায় মেয়েটির অনুভূতি কেমন হল তা বর্ণনা করা অসম্ভব। এ তার জীবনের বিরল এক অভিজ্ঞতা। সহজাত আতঙ্ক তাকে ‘আলদেয়াকোর্বা’র সেই বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দূরে, সেই অনুভবে নবাগতা মেয়ের মুখ মিশে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে, আমাদের দুঃস্বপ্নে দেখা চেহারাগুলো যেমন হয় আর সেই সময় ওর প্রতি নেলার মনে জন্ম নিচ্ছে আন্তরিক মুগ্ধতা এবং গভীর ভালোবাসা। মাঝে মাঝে তার মনে হচ্ছে যে,এই মেয়েটি আসলে ‘কুমারী মা’, সরল বিশ্বাসে নেলা তাকে ‘কুমারী মা’ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছে না। চোখের সামনে করুণার প্রতিমূর্তি, নেলার মনে হচ্ছে, এ তো মহান স্বর্গের অভ্যন্তর সে দেখতে পাচ্ছে, ফ্লোরেন্তিনার বিশুদ্ধ আত্মা পরিপূর্ণ নিখাদ ভালোবাসায় আর ঔদার্যে, তার কথাবার্তা যেমন মার্জিত তেমনই দরদি, সান্ত্বনা পাওয়া যায় তার প্রতিটি বাক্যে। মারিয়ানেলার মধ্যে এমন একটা বিশ্বাস জন্ম নেয় যে, সে তার নতুন দিদিকে কখনই ঘৃণা করতে পারবে না। স্বতোৎসারিত আবেগে সে যাকে এত ভালোবেসে ফেলেছে তাকে আবার ঘৃণার চোখে দেখা যায় কি? ঝগড়াঝাঁটি হলে বিতৃষ্ণা এবং ঘৃণার ভাব পড়ে থাকে জলের নীচে জমে থাকা ময়লার মতো,সেই ভাব আপনা থেকেই চলে যায়, তার রেশও থাকে না। আবার বন্ধুত্বের মধ্যে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা গড়ে ওঠে। কিন্তু এক্ষেত্রে অপছন্দের ভাবটা যদি চলেও যায় তার ভাবাবেগে এমন একটা কাঁটা ফুটেছে যে, সেটা শুধু খচখচ করা ছাড়া কিছুই করতে পারছে না, বাড়ছেও না, কমছেও না সে ব্যথা, ভালোবাসার এক কাঁটা, নৈতিকতার মাপে এ এমন এক জ্বালা, এমন এক দুঃখ যা বোঝানো খুব কঠিন। সেনতেনোর বাড়িতে দেখা যাচ্ছে যে, নেলা খাওয়াদাওয়া করছে না, কথাবার্তাও বলছে না, চলাফেরাও করছে না, মূর্তির মতো তার অবস্থা, কতদিন হয়ে গেল তার গান শোনা যায়নি, না দিনে, না রাতে। তার চলচ্ছক্তিহীনতা চরম অবস্থায় পৌঁছে গেল, তানাসিও তাকে সোকার্তেস-এর সবচেয়ে ভালো দোকান থেকে তামাক আনতে বলেছিল কিন্তু যেতে যেতে সে রাস্তায় বসে পড়েছিল এবং সারাদিন সেভাবেই কেটে গেল।
অপারেশনের পর আটদিন কেটে গেছে, সকালবেলায় সেদিন সে এনজিনিয়ার-কর্তার বাড়ি গেল, তাকে দেখেই সোফিয়া বললেন:
-নেলা, এসেছিস? খবর শুনেছিস? পাবলোর ব্যান্ডেজ আজ খোলা হয়েছে…শুনলাম সে একটু একটু দেখতে পাচ্ছে, দৃষ্টিশক্তি আসছে…কর্মশালার কর্তা উলিসেস এইমাত্র বলে গেল…তেওদোরো এখনও আসেননি, আমরা এক্ষুণি জানতে পারব। সত্যি দেখতে পেলে, ওঃ! আশ্চর্য ঘটনা হয়ে থাকবে। বল নেলা।
এই সংবাদ শোনামাত্র নেলা যেন কিছুক্ষণের জন্যে মৃতবৎ হয়ে পড়ল, হাতদুটো আড়াআড়ি রেখে চিৎকার করে বলল:
-‘কুমারী মা’, তোমার অশেষ দয়া। তুমি অঘটন ঘটালে…তুমি ছাড়া কেউ এমন কান্ড করতে পারেন না।
-তোর আনন্দ হচ্ছে তো?…বেশ, বেশ, হবেই তো; এবার ফ্লোরেন্তিনা ওর প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে -সোফিয়ার কথায় ব্যঙ্গ। সেন্যোরা দন্যা নেলাকে অজস্র অভিনন্দন…এখানে ভগবান তোর ইচ্ছে পূরণ করেছেন, মানুষতো তাই ভাবে…ভগবান গরিব মানুষের। এতো লটারির মতো…প্রথম পুরস্কার, বল নেলা…! তুই বোধহয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবি না…তাই না?…না, না, করিস না…গরীবের কৃতজ্ঞতা বলে কিছু থাকে না, আমি কোনো গরিব লোককে ধন্যবাদ জানাতে দেখিনি। ওরা অহঙ্কারী, যত পায় তত চায়,…পাবলোর সঙ্গে ওর তুতো বোনের বিয়েতো ঠিক হয়ে আছে। খুব মানাবে ওদের; দুজনকেই দেখতে সুন্দর আর মেয়েটাও খুব বুদ্ধিমতী…ওর মুখশ্রীটাওতো অপূর্ব, তবে ওই চাঁদমুখ আর অমন শরীরের সঙ্গে সেই পোশাকটা কি বিশ্রি লেগেছিল! ওঃ! আমাকে যদি সাজতে হয় আমার দরকার নেই ‘সান্তা ইরেনে দে কাম্পো’র দরজি।
এই কথার মধ্যেই প্রবেশ করলেন কার্লোস। তাঁর মুখেচোখে আনন্দের অসামান্য দীপ্তি।
-সফল! সম্পূর্ণ সফল! —দরজা থেকেই তিনি চিৎকার করে বললেন —ঈশ্বরের পরেই আমার দাদা তেওদোরো।
-সত্যি বলছ?
-দিনের আলোর মতো সত্যি!…আমি বিশ্বাস করতে পারিনি…কিন্তু সোফিয়া, কি সাফল্য বলোতো! বিশাল বিজয়! এমন দাদার ভাই বলে গর্বে আমার বুক ফুলে উঠছে; এর চেয়ে বড়ো আনন্দের আর কিছু নেই…রাজা আমার দাদা…ওই একটি কথাই বুক বাজিয়ে বলব, ঈশ্বরের পরেই আছে তেওদোরো।
ক্রমশ…

তরুণকুমার ঘটক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্প্যানিশ ভাষায় প্রাক্তন শিক্ষক ও হিস্পানিক সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য অনুবাদক।‘দনকিহোতে’ এবং‘নিঃসঙ্গতার শতবর্ষ’ সহ বিয়াল্লিশটি গ্রন্থের অনুবাদক।‘দনকিহোতে’ লীলা রায় স্মারক পুরস্কার অর্জন করে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর অনুদিত গল্প কবিতা ছাড়াও প্রকাশিত হয় স্পেন ও লাতিন আমেরিকার সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ।
©All Rights Reserved by Torkito Tarjoni