POEMS of AMALENDU BISWAS

উড়ন্ত ডানার রং
হাওয়া হলে, রৌদ্র এলে, পাখিরা কেমন
আনন্দ উড়ান দিতে পারে শূন্য আশমানে
অথচ আকাশ দ্যাখো বদলায়
মুখ, চোখ, শরীরী বিভংগ!
মেঘ ভাসলে বৃষ্টি হলে পাখিরা আবার
কয়েদির মত গোপনে লুকোয় মুখ
নির্জন চিলকোঠায়, ছাদের কার্ণিশে।
ডানার পরিধি বন্ধ রাখে বিষাদ খয়েরি ঘরে
নীলাভ স্বপ্ন আঁকতে থাকে
বিন্যস্ত পাতার অতল মুকুরে।
ওহে মুকুর তাহলে তুমি বলো
আজ আর বেঁধে রেখোনা আড়ালে
উড়ন্ত ডানার রং আরো একবার
চিনে নিতে ছেড়ে দাও ওই চরাচরে!
শারদ প্রচ্ছদে
আশ্বিনের ঘ্রাণ যেন ফুটে থাকে শারদ প্রচ্ছদে।
ওদিকে দীঘির নম্রজলে গ্রীবা উঁচু করে
ফুটে আছে থরে থরে জলপদ্ম!
পদ্মের আড়ালে যদি জলকে উটের
খলমুখী গরল ছোবল তাক করে
তোমার সকাশে যদি ওৎ পেতে থাকে
তাকে আজ দ্যাখো প্রতিহত করে দেবে
আমার তূণীর শব্দ – অক্ষর – উপমা
এবং মহাপয়ার, মহামায়া ছায়াপাত
লীন হবে শারদ সংখ্যার গন্ধে।
যেখানে গরলহীন নিষ্কলুষ চোখ
আরাধ্য অক্ষরে সেরে নেবো নতুন নৈবেদ্য।
পলাতক চাঁদ
পলাতক চাঁদ থাকে ধাবার পেছনে ;
লংজার্নি গাড়ি পথে সেই মধ্যরাতে
খিদের উদ্রেক হলে হাইওয়ে ঘেঁষে
গরম তন্দুরি আর তরকা, কষামাংস
মোহিনী মায়ায় ডাকে ধাবার কোটরে।
তীব্র আস্বাদন শেষ না হতেই হতে
ইলোরার প্রত্নগাত্র ধরে নেমে আসে
গুপ্ত রিপুরং নড়ে ওঠা প্রজাপতি
উড়ন্ত আগুন মুখে যাবার আগেই
হুইস্কি বোতল থেকে ছিটকে যায় ছিপি
রেড আ্যলার্টের নিষিদ্ধ জেব্রা ক্রশিংএ
আটকে থাকা নিশিঘুম, নীল আকাংখার
ছোটে গাড়ি স্টিয়ারিংএ খোলে ভোর- জানলা।
একার ভেতরে একা
একার ভেতরে একা দেহলি অন্দরে
কেউ নেই পরিজন — দৃশ্যহীন ঘরে।
দৃশ্যত কিছুই নেই রয়েছে অদৃশ্য
সংসার সন্ন্যাস হলে অরূপ বিগ্রহ
আত্মার বিজনতলে বসে থাকে চুপ।
জাগানো সহজ নয়, সুকঠিন ব্রত
যাপনের রীতিভাংগা দুরূহ আন্ধার
আঁধার ভাগানো যায়, কোন গূড়পথে!
নিগূঢ় নিবিড় মগ্ন ব্রহ্মাণ্ড মরমে
জেগে থাকে সুগহনে বিচ্ছুরিত আলো
একার ভেতরে একা জেগে থেকে দেখি
নির্বাক প্রত্যূষ ফুল ফোটে তো গভীরে।
নবমী ভোরের ওস
ছুঁয়েছে কৃত্তিকা দ্যাখো ধানের ডগায়
ফোঁটা ফোঁটা শবনম যেন বা তোমার
নাকনথ হয়ে ফুটে আছে এই ভোরে।
আমিতো সামান্য নবী, রূপ চুরি করি
গহীন গাহনে। নবমী ভোরের ওস
লেগে আছে, ছুঁয়ে আছে, নিসর্গ শরীরে।
নিসর্গই শুধু জানে এই মেঠো পথ
আজ মৃদু ধুলোহীন সোহাগী সম্ভোগে
চেয়েছ কী স্পর্শ– এই তূণীর আংগুল!
আঙুল অমল থাকে শারদ সকালে
ভোরের প্রথম ফুল দেবীর কোচরে
আলগোছে গুজে দিয়ে মালঞ্চ আড়ালে
ক ছড়াবো ওই আত্নরাঙাদীপে।

অমলেন্দু বিশ্বাস। জন্ম= হাওড়া জেলার।সালকিয়াতে। শিক্ষা জীবন ও বেড়ে ওঠা ঠাকুরনগরে।। আশির দশকের সুপরিচিত কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক। লেখার জীবনের শুরুতেই কিংবদন্তি কবি।বিনয় মজুমদারের সঙ্গে গভীর সান্নিধ্য।।তাকে কেন্দ্র করেই নৌকো পত্রিকা সম্পাদনা ও কবিতাচর্চায় উন্নীত হওয়া। প্রথম কাব্যগ্রন্থ = ডুবুরী (1984), সেসময় বাংলা কবিতার পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে = লক্ষীর পা। শাদা পাতা, তোমাকে। বিনম্র সনেটগুচ্ছ।। নির্বাচিত কবিতা সংগ্রহ। প্রবন্ধ গ্রন্থ = যেভাবে দেখেছি কবিদের (2020)। দেশে বিদেশে নিয়মিত কবিতা, গদ্য ও প্রবন্ধ লিখে।থাকেন। নানা সময়ে স্মারক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। বিশেষ করে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় স্নারক সম্মান। কবি বিনয় মজুমদার স্নারক সম্মান। বি.আর আমবেদকর স্মারক সম্মান। উত্তরবংগ নাট্য অকাদেমি স্নারক সম্মান। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। পরমাণু শক্তি বিভাগের ক্রয় ও ভান্ডার বিভাগে কর্মরত ছিলেন।।সপরিবারে কলকাতার উপকন্ঠে বিরাটিতে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন।
©All Rights Reserved by Torkito Tarjoni