poems by arghya roy chowdhury

ফাঁস
তোমার স্বপ্নগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া
করতে করতে দেখলাম তার ভিতর
একটা বাজে পোড়া গাছ, মরা নদী
আর আমার স্বপ্নগুলো থেকে
একটা ধোঁয়াটে পথ চলে গেছে ওই দিকে
স্বপ্নে তোমার বাড়ি যাই
কড়িকাঠে ঝুলে আছে দড়ি
ঘুম ভেঙে দেখি ঝুলে আছ তুমি
আর আমি প্রাণপনে তোমাকে
নামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সমনামবুলিস্ট
আমার স্বপ্নগুলো এখন খুব একঘেয়ে হয়ে গেছে স্বপ্নে আসে একটা ঝাপসা জাহাজ, ক্ষয়িষ্ণু তারামাছের দল
আমি মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে হেঁটে বেড়াই
জানলা খুলে দিই, ফিওর এলিসের শিস দিতে দিতে রাস্তা পেরিয়ে যায় একাকী বিড়াল
আমি ঘুমের মধ্যে তখনও দিগন্ত খুঁজে চলেছি,পাঁজরের সিঁড়িতে বৃদ্ধ সীলমাছ এক তির্যক হেসে উঠছে আর নীচে অগুন্তি সাপ, ওদের বাসা আমার অবচেতনের গর্তের ভেতর
আমি ক্রমশ পৌঁছে গেছি এক সুদৃশ্য কফিনের ঘরে ওখানে শায়িত আমার মৃত পূর্বপুরুষেরা তর্জনীর ইশারায় দেখিয়ে দিচ্ছে আমি কুলাঙ্গার এক, তাদের ক্ষয়রোগের পেছনে আমিই দায়ী।
ভাঙ্গাচোরা আয়না এক মুখের সামনে দুলে ওঠে। ওখানে আমি নেই, আমার আহত স্বপ্নগুলো একঘেয়ে কবিতার মতো স্থির চোখ। আর ওই সাপেরা আমার পা বেয়ে উঠে আসছে তখন।
অন্ধত্ব
স্বপ্ন দেখতে দেখতে যেখানে এসে পৌছালাম
সেখানে ধূসর এক মাঠ, আর একটা সিঁড়ি
নেমে গেছে খাদে
বস্তুত কখনো কখনো স্বপ্নের ভিতর গিলোটিন এক
নেমে আসে। চৌকাঠে গোসাপের মতো
অবদমিত কাম দেখি লকলকে চেরা তার জিভ
ওই মাঠ, ওই খাদ অনিবার্য পাশে এসে বসে
অন্ধ দর্জি এক বলে ওঠে ওইখানে রাখা আছে রত্নগুহা, আলিবাবা বিছিয়েছে পাশার এক দান
গুহার ভিতরে গিয়ে ঢুকি
স্বপ্নরা চোখ ঠেরে হাসে।
মেঘের ব্যাকইয়ার্ড
মেঘ মানে কিছু জল, পাহাড়, টয়ট্রেন
মেঘ মানে অভিমানী মুখের চারপাশে
অলৌকিক কাঠবিড়ালীর খেলা
সারারাত কাঁথায় মোড়া স্বপ্নের ভেতর
মেঘ ঢুকে পড়লে দেখি আমিও মেঘের মতো
ভেসে যেতে যেতে তোমার উঠোনে
কিছু ভালোবাসার বৃষ্টি ঝরিয়ে দিলাম
আর তুমি মেঘ সাজিয়ে রেখেছো বারান্দার আলোয়, তোমার অভিমানী মুখ ওই পাহাড়ি পথের ভাঁজে ভাঁজে বৃষ্টি আর মেঘদের সঙ্গে দূরের
বাঁকে মিলিয়ে যাচ্ছে, ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে…
চৌকাঠ
অপেক্ষা থেকে উঠে গেছে যে পথ
সেখানে অসুস্থ পিতার আরোগ্য চেয়ে
সন্ধ্যের পিদিম জ্বলে ওঠে
ফিরে আসার দরজা খোলা রেখে
চিঠি আসবে ভেবে মাথা কুটে মরেছে দুপুর
অন্ধকারের বুকে উড়েছে ফানুস
অপেক্ষা পলক ফেলে না
স্বপ্নের সিঁড়ি ভাঙে, মোমবাতি পুড়ে যায়
ফিসফিসে স্বরে।

অর্ঘ্য রায় চৌধুরীর জন্ম ১৯৭৬ সালে। কলকাতা নিবাসী অর্ঘ্য, কলকাতা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি লিটল ম্যাগাজিনে লেখালেখি শুরু করেন। একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে, নাম "বৃষ্টিপাতের রাতগুলো।" অর্ঘ্য কবিতার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গদ্যও লিখে থাকেন। যদিও কবিতাই তার বিশেষ ভালোলাগার জায়গা
© All rights reserved by Torkito Tarjoni