BURMESE FOLKTALE translated by INDRANI ROY

অন্যের প্রতি হিংসে করলে নিজের ক্ষতি হয়
একদা এক রাজ্যে বাস করত এক ধোপা ও কুমোর। তারা ছিলো ছেলেবেলার বন্ধু ও প্রতিবেশী । একদিকে কুমোরের ভাগ্য যখন খারাপ যাচ্ছে অন্যদিকে সে তার চোখের সামনেই দেখছে ধোপার উন্নতি , ফলে কুমোর হিংসায় ধোপার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। যত সময় এগোতে থাকে, কুমোর ধোপার প্রতি হিংসায় ও নিজের প্রতি অমনোযোগে নিজের ক্ষতি করতে থাকে। সারারাত জেগে সে চিন্তা করে ও নিজের মনেই বিড়বিড় করে চলে ,
“এই বদমাশটা, কি করে দিনের পর দিন এত ধনী হয়ে উঠছে, আর কেন আমার সামর্থ্য থাকতেও আমি তা পারছি না।” শেষপর্যন্ত সে ধোপার ক্ষতি করতে এক ফন্দি করে।
শহরের বাইরে এক বাগানে রাজা হাতির পিঠে চড়ে ঘুরতে যেতেন, পরদিন সকালে কুমোর রাজার সাথে দেখা করার মতলবে পথের ধারে বসে রইল। রাজা যখন যাচ্ছিলেন সে চিৎকার করে বলল,
“ কি লজ্জার ব্যাপার আমাদের দেশের রাজা একটা কালো হাতির পিঠে চড়ে যাচ্ছে, যে হাতিকে ধুয়ে পরিষ্কার করে চকচকে সাদা হাতিতে পরিণত করতে পারে একজন ভালো ধোপা।”
রাজার ভালো বিচারবুদ্ধি না থাকায় তিনি হাতিকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ হ্যাঁ , তোমার পরামর্শটা খুব ভালো। কিন্তু এমন ভালো ধোপা কোথায় পাবো যে কি না কালো হাতি পরিষ্কার করে সাদা করে দিতে পারে ?”
কুমোর বলল “ বিশেষ ধরনের ভালো সাবান ও সোডা রয়েছে যা একজন ভালো ধোপাই জানেন। সেই ভালো সাবান ও সোডা একজন ধোপার কাছেই থাকে, যে সত্যিই তার দক্ষতায় এই রাজকীয় হাতি পরিষ্কার করতে পারবে । আমি জানি একজন ভালো ধোপার কথা যে এই কাজ করতে পারবে। সে আর কেউনা আমারই প্রতিবেশী।”
রাজা খুশি হয়ে কুমোরকে চুনীর আংটি উপহার দিলেন।
রাজা সাদা হাতিতে ঘোরার আশায় আর বাগানের পথে না গিয়ে প্রাসাদে ফিরে গেলেন। ধোপাকে তিনি ডেকে পাঠালেন, ধোপা প্রাসাদে এলে রাজা বলল,
“ তুমি একজন সৎ ধোপা, তুমি কখনোই প্রচার করোনি যে তুমি কালো হাতিকে পরিষ্কার করে সাদা করে দিতে পারো। এই নাও আমার কালো হাতিটাকে নিয়ে যাও সাতদিন সময় দিলাম একে চকচকে সাদা করে নিয়ে এসো।”
ধোপাটি ছিল বুদ্ধিমান ব্যক্তি, সে বুঝতে পারল তার প্রতিবেশী কুমোর তার প্রতি হিংসায় রাজাকে ভুল বুঝিয়েছে। যেহেতু ধোপা চুপ করে ছিল রাজা উত্তেজিত হয়ে বললেন ,
“তুমি কি লুকোচ্ছ ? তুমি কি চাও তোমার মাথাটি আমি দেহ থেকে আলাদা করে দিই?”
ধোপা উত্তরে বলল, “ প্রভু এ আমার কাছে খুব সম্মানের যে আমি আপনার হাতিটিকে পরিষ্কার করব , কিন্তু আমি ভাবছি পাত্রটির কথা। আপনি নিশ্চয়ই জানেন জামাকাপড় পরিষ্কার করার পরে তাকে একটা বড় পাত্রে রেখে বাষ্প দিতে হয়ে যাতে সে সাদা হয়ে যায়। আর তাই হাতিটিকেও সাদা করতে একটা বিশালায়তন পাত্রের প্রয়োজন।”
রাজা ধোপার কথায় রাজি হয়ে কুমোরকে ডেকে পাঠাল এবং একটি বড় পাত্র তৈরি করতে বলল যেখানে হাতিটিকে রেখে বাষ্প দেওয়া যাবে।
সুতরাং , কুমোর বড় পাত্রটি তৈরি করতে অনেক দিন সময় নিল। যখন মাটির পাত্র তৈরি হয়ে গেল, ধোপা হাতিটিকে ধুয়ে পরিষ্কার করে তাকে পাত্রে রাখল। হাতিটি যখনই মাটির পাত্রে পা রাখল পাত্রটি হাতির ভারি ওজনের জন্য ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
রাজা কুমোরকে ডেকে আদেশ দিলেন , “পাত্রটিকে আর মোটা করো।” কিন্তু পরের পাত্রটিতেও হাতিকে পাত্রে রাখা মাত্রই একইভাবে ভেঙ্গে গেল । রাজা আরেকটি পাত্র তৈরির আদেশ দিলেন এবং আরও একটি পাত্র, এইভাবেই চলতে থাকল শেষে কুমোর সম্পূর্ণরূপে নিঃস্ব হয়ে মনকষ্টে মারা গেল।

ইন্দ্রাণী রায়। জন্ম কলকাতায়। বেথুন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। লেখার প্রথম প্রকাশ তর্কিত তর্জনী পত্রিকায়।
©All Rights Reserved by Torkito Tarjoni
লেখাটি খুব সুন্দর হয়েছে ইন্দ্রানী। নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটবে লেখাটি পড়ে।